লালন মেলা

 লালন মেলা হলো বাউল সাধক ফকির লালন শাহের স্মরণে অনুষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা, যা প্রতিবছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াতে আয়োজন করা হয়। এই মেলা লালন শাহের দর্শন, বাউল গান, এবং বাউল সম্প্রদায়ের জীবনদর্শনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত, বাউল, ও দর্শনার্থীরা আসেন।

লালন মেলার বৈশিষ্ট্য:



1. আয়োজনের সময়: লালন মেলা সাধারণত ফকির লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চৈত্র মাসে (মার্চ-এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়। তবে এটি তাঁর জন্মবার্ষিকীতেও আয়োজিত হতে পারে। মেলাটি তিন থেকে পাঁচ দিন ধরে চলে।

2. আসরের স্থান: কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া, যেখানে লালন শাহের আখড়াবাড়ি অবস্থিত, সেখানেই মূল মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। লালন শাহের মাজার বা সমাধিস্থলে ভক্তরা জমায়েত হন এবং তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

3. বাউল গান ও অনুষ্ঠান: লালন মেলার মূল আকর্ষণ হলো বাউল গান। লালন শাহের রচিত গানের মধ্যে জীবনদর্শন, মানবতা, এবং আধ্যাত্মিক ভাবধারা প্রতিফলিত হয়। মেলায় বিভিন্ন বাউল শিল্পী রাতভর লালনের গান পরিবেশন করেন। গানের আসর ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে এবং লালনের গান শোনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে।

4. দর্শন ও আদর্শ: লালন শাহ তাঁর দর্শনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভেদাভেদকে অস্বীকার করে মানুষের মধ্যে মানবতার বাণী প্রচার করেছেন। মেলায় তাঁর আদর্শ ও দর্শনের আলোচনা হয় এবং মানুষকে ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়।

5. পণ্য প্রদর্শনী: মেলার আরেকটি বড় অংশ হলো হস্তশিল্প, গ্রামীণ পণ্য, এবং বাউল সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত সামগ্রী প্রদর্শনী। মেলায় বাউল পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, বই এবং লালনের দর্শন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।

6. বিশ্ব থেকে দর্শনার্থী: শুধু বাংলাদেশ নয়, লালন মেলায় অংশ নিতে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লালন ভক্তরা আসেন। তাঁরা লালনের চিন্তা-চেতনা, দর্শন, এবং গানের প্রতি গভীর অনুরাগে আকৃষ্ট হয়ে ছেঁউড়িয়ায় আসেন।

লালন মেলার তাৎপর্য:

লালন মেলা শুধু একটি মেলা নয়, এটি লালন শাহের চিন্তা-চেতনা এবং বাউলদের আধ্যাত্মিক জীবনধারা নিয়ে একটি বৃহত্তর উদযাপন। এই মেলার মাধ্যমে ভক্তরা লালনের গান ও দর্শনের সাথে নতুনভাবে পরিচিত হয় এবং মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ, শান্তি, এবং মানবতার বাণী ছড়িয়ে পড়ে।


Post a Comment

0 Comments